রুবেল রানা'র কবিতা,
তবুও ভালোবাসা
আহ্লাদ মায়াবী কথার ছলে সুখো বন্ধন
অতিক্রম দূর দিগন্ত মন উল্লাসে
ক্রমে ক্রমে রঙিন স্বপ্নের তৈরি
মুহুর্তে ভালো লেগে যাওয়ার-
উপক্রম আবেগী মনের।
সে তো গেল অতীতের প্রথম ধারা
উছলানো উত্তলা টিনএজ আবেগর
বয়স বৃদ্ধিতে দিন অতিক্রম-
এ বেলায় কী পেলে?
এখন সামান্য ভালোবাসা পাওয়াটা হবে
অনেক বড় পাওয়া
শুধুই অপেক্ষার দৃষ্টি চেয়ে থাকা ভালোবাসার আশায়।
(কারুকাজ-এ প্রকাশিত)
![]() |
পাখি প্রেমিক রুবেল রানা |
গোপন পাপের শাস্তি
কত উৎসাহ আনন্দে সেদিনগুলো যাপন করেছি
কোনো কমতি ছিল না আনন্দ উৎসবের,
সেসবের মাঝে আমার গোপন আনন্দটা খুব ভোগের ছিল।
অর্থ ও ক্ষমতা ব্যবহার করে তুলে এনেছিলাম অসহায় নর-নারী, কুমারী যুবতী
মনো তৃপ্তিতে যৌনচার করেছিলাম তাদের ওপর,
ছুঁয়েছে আমার পাপিষ্ঠ হাত-
তাদের দেহের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে, খাঁজে খাঁজে।
এ সবই ছিল আমার গোপন মিশন
সমাজ জানতে পারেনি এ অপর্কমের কথা-
সমাজ না জানলেও একজন ঠিকই জেনেছে বা দেখেছেন
তিনি হলেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তা
তার চোখ তো ফাঁকি দেয়া যায় না, সমাজের চোখের মতো?
আজ আমার সকল ক্ষমতা শেষ
কেড়ে নিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা আমার ক্ষমতাগুলো
বাদ রাখেননি স্ত্রী সাথে সহবাসের ক্ষমতাটুকুও
মাত্র তো মধ্য বয়স আমার,
নিজের স্ত্রী এখন পর পুরুষের শয্যাসঙ্গী হয়
জেনেও কিছু বলতে পারি না।
সারা'রঙ্গ আমার রোগ কীটপতঙ্গ হয়ে কুরে কুরে খাচ্ছে
অসহ্য যন্ত্রণাতে বাঁশি বিছানাকে কাতরাই
কেউ নেয় না আমার কোন খোঁজ,
এখন আমার কোন ক্ষমতা নেই
এ যে আমার গোপন পাপের শাস্তি।
(৮/২/১৫ রোববার)
![]() |
যেন আহমদ ছফার পাখি |
মনোসত্ত বিবেক
ত্রুমেই জঠিলতার পথে পৃথিবী
মানুষ মানুষে হিংস্র শত্রুতে
ভুলে যাচ্ছে মায়া-মমতা, স্নেহ
মায়া-ভালোসা অভাব বোধে কষ্টত্ব।
হারিয়ে যাবে কী সত্যিগুলো,
ঢেকে যাবে কেনো মিথ্যের কাছে?
হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদী স্বর
হারিয়ে যাচ্ছে মনো বিবেক।
(৩১-১০-১৪ দৈনিক বর্তমান)
![]() |
এক ছিল কর্মস্থল |
মায়ারূপ
বেঁধেছ তোমারই রূপে আমায়
মায়াময় রূপেতে মুগ্ধ সুখে,
কাজল রেখা দু'চোখের চাহনি তোমার
ঝড় তুলে আমার ভেতরে
এক অন্যরকম কাঁপন ওঠে বুকে।
মুখে তোমার মুক্ত হাসি সোনা ঝরা রোদ
বিকেলের সাজে সাজো যখন
খোঁপায় পরে কাঁচা বেলি ফুল,
আবেগী মন তখন উত্তাল-পাত্তাল
তোমার স্পর্শ পেতে হয় ব্যাকুল।
(১৩-১০-১৫-দৈনিক সমকাল)
![]() |
কৃষক রুবেল রানা |
ভাগ্যরেখা
কত যে অসুখি হাহাকার বুকের ভিতর
অন্যের সুখ দেখে হাহাকারের মাত্রা
দ্বিগুণ রূপ ধারণ করে,
কষ্টে কষ্টে কালোভার হয়ে যাই।
স্বপ্ন, আশা, চাওয়া-পাওয়া সবই
কল্পনাতে রয়ে যায়
কতজনেরই তো চাওয়া-পাওয়া, অবাস্তব কিছু পূর্ণ
হয়ে যায়,
আমার হয় না কেন? সব চাওয়াই আমার ছোট।
ছোট থাকতে মা বলেছিল আমার
ভাগ্যরেখা ভালো না
কোনো এক সাধু আমার হাত দেখে জানিয়েছিল
একথা
কুসংস্কার বলে বিশ্বাসই ছিল না সেই কথা,
এখন কী তাহলে সেই কথায় সত্য বা কাকতালীয়
মিলে গেল?
হে বিধি, এমনি ভাগ্যই যদি দিলে,
তাহলে কেন এতদিনের বেঁচে থাকার আয়ু দিলে?
পিছনে ফেলে এসেছি বাইশটি বসন্ত
কল্পনায় ভর করে, আর নয় কল্পনার ভর,
বদলে দেও ভাগ্যরেখা, বাঁচাও মনের আশা
নয় তো নিয়ে যাও এই বান্দাকে চির নির্দায়।
(২৩-১১-১৪-দৈনিক জনতা)
অতি অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন রুবেল রানা। ছড়া কবিতা গল্প অসংখ্য লিখেছেন। অথচ নেই কোনো একক বই। গতবছর এইদিনে ক্যান্সার রোগের আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোকগমন করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রপত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হতো। যদিও আমি তখন লেখালেখিতে আসিনি। ২০২০ সালে। সৈয়দ শরীফ ভাইয়ের একটা পোস্টে রুবেল রানা ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এর জন্য ধন্যবাদ দেবো ফেসবুককে। শরীফ ভাইয়ের পোস্টা ছিল রুবেল রানা ভাইয়ের চিকিৎসা জন্য আবেদনময়ী। ওখান থেকে উনার সঙ্গে পরিচয় হবার পর আমিও পোস্টের পর পোস্ট দেই। পত্রপত্রিকার সঙ্গে কথা বলি তার চিকিৎসার জন্য একটা আবেদন পত্র প্রকাশের। কয়েকটি পত্রিকা রাজিও হয়েছিল। এর মাঝে রুবেল রানা ভাইয়ের সঙ্গে আমার কয়েকদিন কয়েকবার মোবাইল ফোনে কথা হলো। তার পারিবারিক, চিকিৎসা খরচ বিষয়াদি নিয়ে। তখন কিন্তু তিনি হাসপাতালের ব্রেডে শুয়ে শুয়েই আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আবেদন প্রতিবেদনটি আমি নিজেই লেখার চেষ্টা করছিলাম। লেখা কাজটি এখনো শেষ হয়নি। শেষ হবে ক্যামনে যেদিন লেখা শুরু করি তার পরদিনই রুবেল রানা ভাই ক্যান্সারের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে মৃত্যু বরণ করেন।গতবছর এইদিনে রুবেল রানা ভাই মারা যান, ইচ্ছা ছিল তার পরিবারকে কিছু সাহায্য দেব। কিন্তু হায়! এমন দিনদশা আমার মতো আর কারও যেন নাই। তবু আজ এই তার প্রয়াণ দিনে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা জানাই।
জুবায়ের দুখু
Comments
Post a Comment