পার্থ মল্লিক এর গুচ্ছ কবিতা
শহরে রাত নেমে আসে
খুব রাত হলে, ঘরের জানালা খুলে দিয়ে
আমি অন্ধকারে চুপচাপ বসে থাকি— ইটের দেয়াল বেয়ে
টিকটিকি নেমে আসে অশ্রুর গতি নিয়ে
আকাশের নিচে কার খুন হবে আজ— তার রক্ত দিয়ে
শহরের কোনখানে হ্যারিকেন জ্বলে ওঠে? খুব আলো?
আমি চিঠি পাইনি তো— খবরের কাগজে তবু সহজ সংবাদ
শোনো, মৃতের গল্প জানে শ্মশানের ডোম
লাশকাটা ঘরে প্রহরী তো ছিল— তার হৃৎপিণ্ড কে নিয়ে গেল এসে?
কে এতটা চতুর?— টেবিলের নিচে পড়ে আছে নীল ছুরি
আর শহর ঘুমিয়ে আছে দেহের সুবাসে।
ঈশ্বরের সঙ্গে
সেদিন ঘুমের ভেতরে ঈশ্বর এসে বললেন,
'তোমার ইচ্ছের কথা খাতায় লিখে রেখো
যেভাবে যত্নে রাখো পুরনো জীবন— ঠিক সেইভাবে
তোমার পাপের কথা লিখে রাখো ভাগ্যরেখায়'
শীত এলে ভুলে যাই বৃষ্টির কথা— নিজের মুখের মতো
যদি শহরে পাই কোনো লোক— যদি তার জীবনের সাথে
হুবুহু মিলে যায় আমার জীবন— কী জবাব দেব তোমাকে ঈশ্বর?
অথচ রাতের কথা আজও বলাই হলো না
যার বুকে মিশে আছে আঁধারের মতো নীরবতা
যার কাছে পড়ে আছে আমার হৃদয়— তার মুখ এঁকে রাখি সন্ধ্যাবেলায়
রাত্রিবেলার পাখি জানালার কাছে এসে ডানা ঝাপটায়
আর বলে, 'আমি সেই দেবদূত! আর কতকাল ধরে
তুমি লিখে যাবে পাপের কবিতা? এসো, গান গাও—
আর জেগে ওঠো শরতের মেঘের মতন।'
এ যেন কিছুই নয়
শীতকাল শেষ হতে চলল, এবার আমি যাইনি কোনো ফুলের দোকানে
শুধু ভুল করে সাথে নিয়ে ফিরেছি দুপুরবেলার ছায়া
ঘরে বাড়তি কোনো চেয়ার নেই, আলাদা বিছানা নেই
কোথায় বসতে দেব আমার এই ক্লান্ত ছায়াকে?
একবার জানাতে চেয়েছিলাম আমার অসুখের কথা
অথচ এবার তেমন কিছুই লিখিনি, কবিতা তো একদমই নয়
শুধু দু-একটা চিঠির উত্তর— আমার ফুরিয়ে এসেছে কলমের কালি;
তারপরও প্রিয় হেমন্তকে আরও একবার ফিরে পেতে চাই
তাকে লিখতে চাই, কীভাবে ঘুমের মধ্যে আমি হাওয়ায় উড়েছি
এবার আমি শেষ জন্মদিনের রাতে, স্বপ্নে দেখেছি মাকে
তার মুখ ছিল সিঁদুরের মতো রাঙা, ভোরের মতো শীতল
আমি তার হাত ধরে উঠে গেছি উঁচু পাহাড়ের বুকে
এখন পৃথিবীর নিচে ভেসে যায় মেঘ— ভুল করে পকেটে জমানো ছিল
কী এমন কথা, যা তোমাকে বলার ছিল!
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি
আমি আজ নিজেকে কোথায় হারিয়ে ফেলেছি যেন
তাই নিজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছি ঘর ছেড়ে
উঠানের পাশে একা নিমমগাছ— নিস্তব্ধ ঘরগুলো চেয়ে থাকে রাস্তার দিকে
সন্তানহীন বৃদ্ধার সংসারে আমি নেই— নিজেকে খুঁজেছি তাই ভাতের হাঁড়িতে
মেঘের ছায়ার নিচে কোন গল্প পেতেছে জীবন?
গিয়েছি অনেক দূর— হিজলের বন ছেড়ে, নিজেকে অনেক ডেকেছি হাত নেড়ে
আমি কি কোথাও নেই— বাউলের গানে— তার আকুল পরাণে
আমাকে দেখিনি তার বেহালার সুরে— আজও আলো জ্বলে প্রেমিকার ঘরে
আমি নেই তার সুখে— আমার দুঃখগুলো পানার ফুলের মতো হঠাৎ গিয়েছে মরে;
আমি নেই দুপুরের কবিতায়, সেলুনের আয়নায়
বাবা ডাকে, 'আয় খোকা'
মা ডাকে, 'আয় সোনা'
বোন ডাকে, 'আয় দাদা'
এতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে গেছি কবে?
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি ফুলহীন শুকনো মাটির এক টবে।
[[ সুহৃদ ও শুভাকাঙ্ক্ষী, আসছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২-এ কবি রহিম ইবনে বাহাজ এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দূর্বা জীবন" প্রকাশিত হবে। প্রকাশিতব্য গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন উদীয়মান শিল্পী আল নোমান। ]]
Comments
Post a Comment