জুবায়ের দুখু এর ২০১৯ কবিতা এলবাম




শেষ অনুরোধ

আমার মৃত্যুর পর তুমি বাসর সাজিয়ো

পরম সুখে সংসার বেঁধে নিও।

আমি না হয় থাকবো চিরকাল একা

ভুলে অভুলেও হবে না আর দেখা।


তোমাকে ভালোবাসতে ভালোবাসতে

আমি মরতে ও পারি হাসতে হাসতে

তুমি বরং আমার একটা কথা রেখে দিয়ো

আমার মৃত্যুর পর তুমি বাসর সাজিয়ে নিও।


বৃষ্টি অথবা তোমার চোখের জল

চিরকুট ভিজে গেলে ভিজে যাবে তোমার নাম 

মন্দিরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তবু গাইছে কেউ বৃষ্টির বদনাম। 


চড়ুই পাখির ঝাঁক

মেহেগুনি গাছের ছায়া তলে যায় উড়ে,

কাঁচের আকাশ ছিঁড়ে 

বৃষ্টি আসে আমন আউশের তেপান্তর জুড়ে। 


বৃষ্টি আসে কামানীফুল বনে 

উদম উঠোনে কুমোরের হাড়ি পাতিলের উপরে। 

তখনো ঘুমোইনি মসজিদের মিনার 

বৃষ্টি আসে মেঘ মুয়াজ্জিনের পুরনো কণ্ঠ জুড়ে। 


তোমার অভিমানের নিচে জন্মায় যে ফুল গাছটা 

বৃষ্টি অথবা তোমার চোখের জলে ভিজে যায় বারংবার তার জীবনটা। 


আহবান

খোদার আরশে খোদা বসে নেই

চলে এসেছে--মানুষের অন্তরেই

বিদঘুট অন্ধকার পরিচ্ছন্নর দায়িত্বে

কিন্তু কেউ তার কথা নিচ্ছে না আয়ত্বে।


হাভাতে লক্ষণ দেখে খোদা বেসামাল

ভাবছে এরা ভাত আহার করে না কতকাল!

খোদা নিরাশ না হয়ে লড়েই চলছে

আমার ইবাদত কর শতবার বলছে।


নিঃসঙ্গ জীবন 

তুমি হীন কেটে যাচ্ছে ঘোরক্রান্ত  জীবন 

তুচ্ছার্থক দাঁড়িয়ে জন্ম থেকে বৃক্ষের মতন।

তোমাকে ভালোবেসে হতে পারিনি সুখী

এক পৃথিবী সমান হয়েছি বিষণ্ণ আর দুখী।


তুমি সর্বদা সুখে রও এই অবলীলায়

হলে না আমার খোদার কাছে ও বলায়।

কেটে যায় নিঃসঙ্গ জীবন ঘোর তৃষ্ণায় 

তুমি হীন শূন্যতম এই হৃৎ ব্যালকনীয়ায়।


বেদনাহত বক্ষ তীর্থ কাক হয়ে

তোমাকে পাবো বলে জীবন গেলো বয়ে।


আত্মার দরজা

ওপাশ থেকে কারা যেন!

কড়া নাড়ে আত্মার দরজা-

আজরাইল ফেরেশতা মালাকাল মায়ুত?

নাকি স্বয়ং খোদা নিজে ?

এরকম স্বপ্ন দেখে হতাশ চোখে ঘুম ভাঙে।

আতঙ্কে সিটে যাই কংক্রিটের দেয়ালে।


আজকাল মৃত্যু মৃত্যু ভয়ে গ্রাসিত দেহ

ভিতর মহল-নড়বড় একাকার

কি জানি কোনদিন আত্মার দরজা খুলে

খোদা আমাকে মৃত ঘোষণা করে।


খোদা পৃথিবীর প্রধান টিচার

এই রাষ্ট্রের মৃত্যুর রঙ লেগেছে

রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকার গায়

দিনে দিনে পায়ের-নিচে মাটি 

সরে দাঁড়ানোর--জায়গা নায়।


হাই খোদা দেখ তোর পাঠশালা 

দিন-ধর্মের দোহাইয়ে সব তালা

কারা যে এই, খানে বসত করে

নিত্যদিন মানুষ লাশ হয়ে পড়ে।


তুই দেখ খোদা ভালো করে দেখ

তারপর সব পাপের হিসাব লেখ

হিসাব শেষ একদিন হোক বিচার

তুইতো এ পৃথিবীর প্রধান টিচার।


মিথ্যের শহর

ওইসব মিথ্যের শহরে...

তোমার কবিতার পদাবলি উৎসব!

আর হয় তোমার নামডাক কবি.

তুমি কবিতা লেখ-

নিরেট শব্দে ঈর্ষাহীন প্রয়াসে।


এই শরতের দিন! তবু ঝরছে বৃষ্টি

ভিজচ্ছে কাঁটাতার। সবুজ ফসল।

ওখানে নতুন কবর-আবরার ঘুমিয়ে

ওটাও ভিজে গেলো আজ! 

এই সমস্ত আবেগ ঘুরপাক খায় দেহ জুড়ে।

তুমি নতুন কবিতা লিখ মিথ্যে শহরের।


তোমার মৃত্যুঘুম

তুমার কবরের পাশে 

একটি শিমুলগাছ দাঁড়িয়ে 


ফুল ফুঁটছে ফুল ঝরছে

সীমান্ত অতিক্রামী পাখিরা 

শিমুলগাছে এসে বসছে।


অথচ তুমার চোখে 

অসমাপ্ত একরাজ্য ঘুম 

তুমি ঘুমিয়ে আছো 

আমি হেটে গেলেও টের পাওনা! 


মানুষের ডাক নাম জীবন না কবর?

দ্বিধাগ্রস্ত জননী-

ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রাত্তি পূর্ণিমা।

একটি নতুন লাশের কবরে।

ওটা মানুষের জীবন না'কি-কবরেরই কবর

এসব বুঝতে হিমশিম খাচ্ছে চন্দ্র দেব।


প্রহর ক্রমে ক্রমে গহীন! ঝড়ে ঝড়ে ঝাড়ছে জোছনা শুক্রাণু। চির নিদ্রায় সমকক্ষ কয়েকটি কবর।

হতে পারে আবরার-নুশরাত অথবা তনু।

ওসব কবরের নাম বাংলাদেশ 

ওসব আত্মার নাম জীবন নয়-জন্ম থেকেই কবর।


তুমি বৃত্তান্ত 

চোখের ভেতর নদী 

সে নদীতে ডুবতে তুমি যদি 

দেখতে তুমি তবে 

জলে ছলে অনলরা রয় সবে।


চোখের ভেতর আকাশ 

হিমেল মরু বাতাস 

সে বাতাসে গা ভাসালে 

ভিজতে তুমি বৃষ্টি জলে। 


চোখের ভেতর তুমি 

তুমি নয়তো এটা যেন, প্রেমভূমি। 

যে ভূমিতে তোমার করব 

আর- প্রেম বিরহী আমি।


তোমার চোখে নীলিমার রঙ

তুমি চেয়ে দেখো নীলিমা রঙ!

নীল নয়তো শাদা অথবা-

অদ্ভুত কালো তার গায়ের সীমা।


তার নিজস্ব একটা আবেগ 

সখ্যতায় চাষ করে নিরবে লুকিয়ে একান্তে

আজকাল সে আবেগ ভর করেছে

তোমার দু আঁখিডোরে!

যার বর্ষণে ভিজে যায় প্রেমিকের হৃদয়।


পুনঃরায়

কেউ নেই

আমাদের বসন্ত দিন ফিরিয়ে দেবার মতো? একটুকরো রোদের মিথ্যে বলার মতো নেই ছায়া-

তুমি বলবে হয়তো.

আমাদের বিষাদের দিন গুলো আবার ফিরিয়ে আনতে

অপরাহ্নর মতো দৈর্ঘ্যে বুক বেঁধে নিতে।


এখানে আকাশ চিরকাল রঙ বদলায়

শিউলির মৌনতায় ভরে থাকে নিশি দগ্ধ বাতাস।

বৃক্ষের শাখায় শাখায় ডাকে কোকিল 

এখানে আগমন হোক তোমার চরণ!


আরো একবার-

আমাদের প্রেমপত্র পুনঃরায় চুক্তিবদ্ধ হোক।


মায়ের ছবি 

আকাশটাকে মনে হয় মায়ের ছবি 

কতো উদাস— ঝলমলে আলোর রবি 

মা তুমি কি কবি? 

সংগ্রামী কবি 

বিদ্রোহী কবি 

সচেতনতার কবি 

ভালোবাসার কবি 

আমাদের লালনপালন আর শুদ্ধতার কবি? 


মা তোমার মুখ দেখলে মনে হয়, 

তোমার মুখে ছড়িয়ে আছে সমস্ত পৃথিবী  

আর, সুখ ও দুঃখ, বসে আছে পাশাপাশি। 

তবু তুমি আমাদের ধাত্রী, 

যেদিকে তাকাই তোমার ছবি— বিশ্বময়।

Comments