আর্জেন্টিনা কেন ফিলিস্তিনের পক্ষে নয়?

 


আমরা ফিলিস্তিন নাকি আর্জেন্টিনাকে বেছে নেব? ইসরায়েলের পক্ষে যে রাষ্ট্র মত প্রকাশ করেছে আমরা কি তাদেরই অধীনস্থ অংশীদার হয়ে থাকব? এই দুটি ভিন্ন মতামতের প্রতিনিধিত্ব করছে আমাদেরই মনুষ্য বিবেক।


প্রশ্ন উঠতেই পারে আর্জেন্টিনা কেন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়নি? উত্তর যে খুবই কঠিন এমন না। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লড়াই এখন পুরো বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ক্ষমতা যে মানবতাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এ চিত্র ফিলিস্তিনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। 


২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে টানা হামলা চালিয়ে পুরো ফিলিস্তিনকে এখন মৃত্যুপুরী তৈরি করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতির ভেঙে গাজায় এখন পর্যন্ত  ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫০,৮০০ ছাড়িয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো অসংখ্য মানুষ। 


ইতিহাস নয় প্রথমে একটু আধুনিক সময়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট মাক্রির আমলে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ইসরায়েলের নিরাপত্তা সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় ওঠে। সে বছরই ইসরায়েলের কাছ থেকে টহল নৌযান ও নজরদারি সরঞ্জাম কেনে আর্জেন্টিনা। নিরাপত্তা সহযোগিতা দীর্ঘদিন ধরেই আর্জেন্টিনা-ইসরায়েল সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। 


১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর ফিলিস্তিনের প্রথম গণঅভ্যুত্থানের সময় নেতা ইয়াসির আরাফাত জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। 


ওই ঘোষণাপত্র অনুযায়ী স্বাধীন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র পাশাপাশি বিদ্যমান থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেই ঘোষণার লক্ষ্য হিসাবে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে মেনে নেন পরিষদের নেতারা।


ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিষদের এ ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আলজেরিয়া। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আরব বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ, ভারত, তুরস্ক, আফ্রিকার আরো বেশকিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র এছাড়া পূর্ব ইউরোপীয় দেশসহ কয়েক ডজন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়।


২০১০ ও ২০১১ সালের শেষের দিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটাতে ইসরায়েলের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার তাগিদে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং চিলিসহ দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়।  


১৯৪৭ সালে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিভাজনের সময় জাতিসংঘের পরিকল্পনার ভোটে অংশগ্রহণে বিরত ছিল আর্জেন্টিনা। তারা চেয়েছিল দুটি রাষ্ট্র এক থাক এবং ফিলিস্তিন ইসরায়েলের অধীনস্থ হয়ে যাক।


এদিকে ১৯৮২ সালের চিত্রপট ভিন্ন। এ বছর  আর্জেন্টিনা লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং বৈরুতে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার নিন্দা জানায়। একই সময়ে আরব দেশগুলো মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জের ( ফকল্যান্ড ) দাবির জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি তাদের কূটনৈতিক সমর্থন প্রদর্শন করে । এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৯৫ সালে আর্জেন্টিনা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দেয় । এবং ২০১১ সালে আর্জেন্টিনা ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্য হিসেবে ইউনেস্কোতে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ভোট দেয়।


শনিবার (১৩ জুলাই) ২০২৪ টাইমস্ অফ ইসরায়েল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, ফিলিস্তিনের হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। যা আর্জেন্টিনা দাবি করেছে। 


এছাড়া সেসময় ফিলিস্তিনের আর্থিক সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি জাভিয়ের মিলের। ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 


ওই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগে শুক্রবার (১২ জুলাই) ২০২৪ সালে আর্জেন্টিনা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের উপর যে হামলা চালিয়েছে তা একটি ন্দিনীয় ব্যাপার। এবং মানবধিকার লঙ্ঘন।


এদিকে এবস ঘটনার পরেই ২০২৪ সালের মে মাসে দেশটির রাষ্ট্রপতি জাভিয়ের মিলের সরকার ফিলিস্তিনের বিষয়ে আর্জেন্টিনার পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে আসে এবং জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ভোট দেয়। এই ভোটটি দেশটির বৈদেশিক নীতিতে ইসরায়েলপন্থি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। 

Comments