ভিনসেন্ট ভ্যান গগ-এর কয়েকটি চিন্তা

ভিনসেন্ট ভ্যান গগ


ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, পৃথিবীর অন্যতম পোস্ট-ইমপ্রেশনিস্ট চিত্রশিল্পী হিসেবে সমাদৃত। জীবদ্দশায় এই শিল্পীর তেমন কদর বা খ্যাতি ছিল না। একদিকে সংগ্রাম, একদিকে প্রেম-বিরহ, আর আবেগের বিচিত্র মালায় গাঁথা।

১৮৫৩ সালের ৩০ মার্চ দক্ষিণ নেদারল্যান্ডসের জুন্ডার্টে একজন যাজকের ঘরে জন্ম নেন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। ১৮৬৯ সালে তিনি হেগের একটি আন্তর্জাতিক শিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রথম কর্মজীবনের সূচনা করেন। এ সময় থেকেই তার ছোট ভাই থিওর সঙ্গে চিঠি লেখা শুরু হয়, যা ভ্যান গগের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। থিও ছিলেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় অবলম্বন ও অনুপ্রেরণা।

চাকরি সূত্রে তাকে লন্ডন ও প্যারিসে যেতে হয়। কিন্তু মন যে নেই কাজে। মন কেবলই ছুটে ছুটে বেড়ায়। ফলস্বরূপ, ১৮৭৬ সালে চাকরি হারিয়ে বসে এই শিল্পী। এরপর কিছুদিনের জন্য ইংল্যান্ডে শিক্ষকতা করেন এবং পরে খ্রিস্টধর্মের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে দক্ষিণ বেলজিয়ামের একটি খনি অঞ্চলের প্রচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

১৮৮০ সালে, ২৭ বছর বয়সে, ভিনসেন্ট ভ্যান গগ শিল্পী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ছিল তার জীবনের এক যুগান্তকারী মুহূর্ত। তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান, নিজেই নিজেকে আঁকা এবং আঁকার কৌশল শেখান। এই সময় তার ভাই থিও আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাকে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেন।

১৮৮৬ সালে, ভ্যান গগ প্যারিসে থিওর কাছে চলে আসেন এবং দেগাস, তুলুস-লৌত্রেক, পিসারো, এবং গগুইনের মতো অনেক বিখ্যাত শিল্পীর সঙ্গে পরিচিত হন। এদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইমপ্রেশনিজমের প্রভাবে তার চিত্রশৈলীতে এক বিশাল পরিবর্তন আসে; রঙগুলো হালকা থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে। এই সময়েই তিনি অসংখ্য আত্ম-প্রতিকৃতি আঁকেন।

১৮৮৮ সালে, ভ্যান গগ দক্ষিণ ফ্রান্সের প্রোভেন্সে চলে যান, যেখানে তিনি তার বিখ্যাত ‘সানফ্লাওয়ারস’ সিরিজটি আঁকেন। তিনি তার বন্ধু গগুইনকে তার সঙ্গে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তবে দুজন খুব বেশিদিন একসঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, ফলে শীঘ্রই তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।

এক রাতে, ভ্যান গগ ক্ষুর দিয়ে গগুইনকে হুমকি দেন এবং পরে অনুতপ্ত হয়ে নিজের কানের একটি অংশ কেটে ফেলেন।

এই ঘটনা ছিল ভ্যান গগকে জীবনের বাকি সময় ধরে ভোগানো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রথম গুরুতর লক্ষণ। এরপর তিনি মানসিক হাসপাতালে সময় কাটিয়েছেন এবং জড়তা, বিষণ্ণতা, এবং অবিশ্বাস্যভাবে ঘনীভূত শৈল্পিক কার্যকলাপের মধ্যে দিনযাপন করেছেন। তার কাজগুলোতে তার চারপাশের গ্রামাঞ্চলের তীব্র রঙ এবং তীব্র আলো প্রতিফলিত হয়েছে।

১৮৯০ সালের ২৭ জুলাই, আবারও বিষণ্ণতায় ভুগলে ভিনসেন্ট ভ্যান গগ নিজেকে গুলি করেন। দুই দিন পর, ২৯ জুলাই, তিনি মারা যান।

অনেক কিছুকে ভালোবাসা ভালো, কারণ এর মধ্যেই শক্তি লুকিয়ে আছে। যে অনেক কিছু ভালোবাসে, সে অনেক কিছু অর্জন করতে পারে, আর ভালোবাসা দিয়ে যা করা হয়, তা সবসময় সুন্দর।

মানুষকে ভালোবাসার চেয়ে সত্যিকারের শৈল্পিক আর কিছু নেই।

জেলেরা জানে– সমুদ্র বিপজ্জনক এবং ঝড়ও ভয়াবহ, কিন্তু তাই বলে তারা কখনো এই বিপদগুলোকে তীরে বসে থাকার জন্য যথেষ্ট কারণ মনে করেনি।

যদি তোমার ভেতরে একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পাও— ‘তুমি ছবি আঁকতে পারো না’, তাহলে অবশ্যই রঙ করো; দেখবে সেই কণ্ঠস্বর নীরব হয়ে যাবে।

জীবনে একঘেয়েমির চেয়ে
আবেগে মরে যাওয়া স্বাচ্ছন্দ্যের।

আমি সবসময় মনে করি— ঈশ্বরকে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, অনেক কিছুকে ভালোবাসা।

আমি আমার হৃদয় আর আত্মাকে কাজে ঢেলে দিয়েছি
আর এই করতে গিয়ে আমি আমার মন হারিয়ে ফেলেছি।

দীর্ঘ সময় ধরে কোনো জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকা তোমাকে পরিণত করে তোলে, এবং সেগুলোর গভীর অর্থ বুঝতে সাহায্য করে।

যদি আমাদের কোনো কিছু করার সাহস না থাকত, তবে জীবনটা কেমন হতো?

আমি প্রায়ই মনে করি, রাত দিনের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত– রঙের দিক থেকে আরও সমৃদ্ধ।

আমি সবসময় এমন কিছু করতে চাই,
যা আমি এখনো করিনি
তবে তা করার জন্য আমি শিখে যাই।

আমি দিন দিন নিজের মতো হওয়ার চেষ্টা করছি,
মানুষ সেটা পছন্দ করুক বা না করুক— তাতে কিছু যায় আসে না।

মানুষে আত্মায় জ্বলন্ত আগুন থাকতেই পারে
কিন্তু কেউ কখনো তার পাশে বসে থাকে না—
চুল্লি থেকে কেবল ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখেই
নিজেদের পথে চলে যায়।

যা তোমার প্রয়োজন, তা পেতে মিথ্যা বলো
আর যা অস্পষ্ট— তা মুছে ফেলো।

উঁচুতে থাকা নক্ষত্র এবং অসীমতা সম্পর্কে সচেতন থাকো
তহলেই জীবন জাদুর মতো মনে হবে।

আমি এতটাই অবাস্তব যে,
আমি যা হতে চাই তা থেকে এখনও অনেক দূরে
কিন্তু ঈশ্বরের দোয়ায় আমি সফল হব।

যে ভালোবাসে, সে অনেক কিছু অর্জন করতে পারে,
এবং শেষ পর্যন্ত যা করে, তা ভালোভাবেই শেষ করে।

যদি তুমি সত্যিই প্রকৃতিকে ভালোবাসো
তবে কেবল তুমিই খুঁজে পাবে ভালোবাসা।

আমি যখন পড়ে যাই, তখনই আমি আবার উঠে দাঁড়াই।

শেষ পর্যন্ত মানুষ নিন্দা, সংশয় এবং নোংরামি ভাববে,
কিন্তু আমরা আরও গান শুনে বাঁচতে চাইবো—

শুরুটা যেকোনো কিছুর চেয়ে কঠিন
তবে, নিজেকে নির্মাণ করতে বিচ্ছেদই উত্তম।



ইংরেজি থেকে বাংলায় করেছেন জুবায়ের দুখু


Comments