ফ্রান্ৎস কাফকা’র প্রেম // জুবায়ের দুখু

 

ফ্রান্ৎস কাফকা


ফ্রান্ৎস কাফকা, একজন অসামান্য আধুনিকতাবাদী সাহিত্যিক, যিনি ‘The Trial’, ‘The Metamorphosis’ বা ‘Letter to His Father’-এর মতো রচনায় জীবনের অস্তিত্ববাদী উদ্বেগ, বিচ্ছিন্নতা ও আত্মসংকোচের নিখুঁত অনুবাদ করে গেছেন। কিন্তু তার সাহিত্যজীবনের মতোই ব্যক্তিজীবন এবং বিশেষ করে তার প্রেম জীবনও ছিল জটিল, দ্বিধাপূর্ণ এবং গভীর আত্মদ্বন্দ্বে আবৃত।

ফেলিস বাউর, সবচেয়ে আলোচিত প্রেম। ফেলিস বাউরের সঙ্গে কাফকার প্রেমই তার জীবনের সবচেয়ে আলোচিত এবং চিঠিপত্রে সর্বাধিক নথিভুক্ত সম্পর্ক। ১৯১২ সালে ম্যাক্স ব্রডের মাধ্যমে প্রথম পরিচয় হয় ফেলিসের সঙ্গে। এই সম্পর্কের পুরোটা জুড়েই ছিল প্রচুর চিঠি, যা পরবর্তীকালে ‘Letters to Felice’ নামে প্রকাশিত হয়।

কাফকা একদিকে চেয়েছিলেন এই প্রেমে স্থিতি আনতে, আবার অন্যদিকে তিনি তার নিজস্ব ‘স্বাধীনতা’, ‘অসুস্থতা’ ও ‘সাহিত্যিক নিঃসঙ্গতা’ রক্ষার জন্য পালাতে চেয়েছেন।

তার চিঠিগুলোয় ফুটে ওঠে ভালোবাসা, অপরাধবোধ, শারীরিক জীর্ণতা ও এক গভীর দার্শনিক দ্বন্দ্ব- ভালোবাসা ও আত্মসংরক্ষণের মধ্যে টানাপোড়েন।

তিনি দু’বার ফেলিসকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেন, আবার প্রত্যাহারও করেন। শেষ পর্যন্ত এই সম্পর্ক ভেঙে যায়।

মিলেনা জেসেনস্কা, কাফকার কাব্যিক প্রেম ও ব্যর্থতা। পরবর্তীতে কাফকা প্রেমে পড়েন চেক সাংবাদিক ও অনুবাদক মিলেনা জেসেনস্কার। তার সঙ্গে মূল যোগাযোগ গড়ে ওঠে মিলেনার কাফকার জার্মান লেখা চেক ভাষায় অনুবাদের সূত্র ধরে। তাদের প্রেমের স্মারক হলো ‘Letters to Milena’।

কিন্তু মিলেনা ছিলেন বিবাহিত, এবং কাফকা ছিলেন তখনও সেই মানসিক ও শারীরিক অস্থিরতায় পর্যুদস্ত। তাদের সম্পর্ক গভীর হলেও কখনো শারীরিক বা সাংসারিক রূপ পায়নি।

ডোরা ডায়ামেন্ট: কাফকার শেষের সঙ্গিনী। জীবনের অন্তিম পর্বে কাফকা সম্পর্ক গড়েন ডোরা ডায়ামেন্টের সঙ্গে- এক তরুণ ইহুদি সমাজতন্ত্রী। ডোরা ছিলেন একমাত্র নারী যার সঙ্গে কাফকা কিছুদিন বাসও করেন, জীবনের শেষ বছরগুলোতে। তার মৃত্যুপর্যন্ত ডোরা পাশে ছিলেন।

কেন কাফকা প্রেমে স্থিতি আনতে পারেননি প্রশ্ন অনেকের। প্রচলিত আছে নিজেকে অসম্পূর্ণ, অযোগ্য, অসুস্থ ভাবতেন তিনি।

ফেলিসে ব্যাওয়কে লেখা কাফকা’র চিঠি  (১৮ আগস্ট, ১৯১২)

‘তুমি কি জানো, ফেলিসে, আমি যখন তোমার চিঠি পাই, তখন সেগুলো একটানা কয়েকবার পড়ে যাই? আমি যেন সেখানে তোমার নিঃশ্বাস খুঁজি, তোমার স্পর্শ খুঁজি। সেই অক্ষরগুলোর মধ্যে আমি তোমাকে খুঁজে বেড়াই- যে তুমি আমার ছোঁয়ার বাইরে, অথচ আমার অস্তিত্বের গভীরে গেঁথে আছ।

তুমি হয়তো ভাবো, আমি নিঃশব্দ, অপ্রস্তুত, হয়তো একটু দূরে সরেও থাকি। কিন্তু আমার ভেতরে এক অসম্ভব ঝড় ওঠে যখন আমি তোমার কথা ভাবি। আমার ভয় হয়, ভালোবাসা বলে যদি কিছু সত্যিই থাকে, তবে সেটি আমার হৃদয়েই পুষে রেখেছি আমি—নির্জন, সংবেদী, অস্থির এক ভালোবাসা।

তুমি আমাকে যে আনন্দ দাও, তা আমাকে ভেঙে ফেলে আবার গড়ে তোলে। কখনো কখনো মনে হয়, আমি এক চিরকালীন অপেক্ষার মধ্যে আটকে আছি- যেখানে তুমি এসে আমার নিঃশ্বাস হয়ে উঠো।

ফেলিসে, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

Comments